Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ইউনিয়নের ইতিহাস

উত্তর বঙ্গের প্রবেশপথ নামে খ্যাত বগুড়া জেলা সদর থেকে আরো ১২ কিলোমিটার উত্তরে যেতে হবে। বিশ্বরোড নামে পরিচিত বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ধরে যে কোনো যানবাহন ব্যবহার করে নেমে পড়া যাবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নগরীতে। সাধারণ চোখে চট্ করে হয়তো এর গুরুত্ব বোঝা একটু কঠিন। কিন্তু যারা ইতিহাস-ঐতিহ্যের খোঁজ-খবর রাখেন তারা এখানে পা রাখতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করেন।
এখন থেকে আড়াই হাজার বছর আগেও এখানে গড়ে উঠেছিল এক সমৃদ্ধ নগর। যার নাম পুন্ড্রনগর বা পুন্ড্রবর্ধন নগর। কালের আবর্তনে এর বর্তমান নাম দাঁড়িয়েছে রায়নগর ইউনিয়ন।

বিভিন্ন কারণে রায়নগর ইউনিয়ন ও মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন প্রত্নস্থল বলে সারা পৃথিবীর পর্যটক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে রায়নগর ইউনিয়ন ও মহাস্থানগড় আকর্ষনীয়।

 

লুকিয়ে থাকা নগর
এক সময় গড়ে উঠেছিল পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রবর্ধন নগর নামের এক প্রাচীন বসতি। যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে খ্রিষ্টীয় ১৫ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এই নগর এক সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে বিস্তার লাভ করে। বেশ কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এখানে অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। এর ভেতর রয়েছেন মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সামন্ত রাজবংশের লোকেরা। এরপর এখানে ধর্মীয় সংস্কার করতে আসেন ইসলাম ধর্ম প্রচারকরা।

অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক আর ইতিহাসবিদ মহাস্থানগড়কে হারিয়ে যাওয়া কিংবদন্তির নগরী পুন্ড্রবর্ধন বলে উল্লেখ করেছেন। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ তেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পুন্ড্রনগরে এসেছিলেন। ভ্রমণের ধারাবিবরণীতে তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার উল্লেখ করে বর্ণনা করেন।

দশম শতকের মধ্যবর্তী সময়ে এখানে রাজত্ব করেন রাজা নরসিংহ বা পরশুরাম। কিংবদন্তি অনুযায়ী রাজা পরশুরাম ছিলেন অত্যাচারী। তাকে উচ্ছেদ করে ইসলাম ধর্মের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আসেন হযরত শাহ্ সুলতান বলখী (রঃ) মাহী সওয়ার। ধর্ম প্রচারক শাহ্ সুলতান বলখী (রঃ) সম্পর্কে রয়েছে আশ্চর্য কিংবদন্তি। শোনা যায়, তিনি মহাস্থানগড় অর্থাৎ প্রাচীন পুন্ড্রনগরে প্রবেশ করার সময় করতোয়া নদী পার হয়েছিলেন একটা বিশাল আকৃতির মাছের পিঠে চড়ে। এ জন্য তার নামের শেষে উল্লেখ করা হয় মাহী সওয়ার বা ‘ মাছের পিঠে আরোহনকরী’।

বাস্তববাদীরা বলেন, মাহী সওয়ার নদী পার হয়েছিলেন ঠিকই তবে তা মাছের পিঠে চড়ে নয়। বরং মাছের আকৃতিতে তৈরি করা নৌকার পিঠে চড়ে। উদাহরণস্বরূপ তারা বলেন, যে রকম ময়ূরের মুখ সদৃশ্য নৌকাকে ময়ূরপঙ্খি নৌকা বলা হয়। এ রকম একটি ঘটনাই হয়তো শেষ পর্যন্ত এই মিথের সৃষ্টি করেছে।

যা বর্তমানে রায়নগর ইউনিয়ন নামে পরিচিত।